সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা এক জায়গা থেকে অন্যত্র বদলি হতে পারলেও এ সুযোগ ছিল না বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষকদের। সে কারণে তাদের জন্য বদলির প্রথা চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। অবশেষ সেই দাবি পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে এমপিওভুক্তদের বদলির ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বদলির সুযোগ পাবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। প্রাথমিক চিন্তা হলো, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের কেবল এ সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে কোন পদ্ধতিতে এ বদলি করা হবে, সে প্রক্রিয়া এখনো ঠিক হয়নি। সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা নেই। এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে সেখান থেকেই অবসর নিতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এখন এটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি সভা হয়েছে। তার ভিত্তিতে এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।
সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরিভাবে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিত। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএর অধীন অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই কেবল এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যায়। না হলে কেউ এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বদলির নীতিমালার একটি খসড়া করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তারপর সেটি যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
কীভাবে বদলি হবে
প্রাথমিক চিন্তাগুলো হলো, এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এ সুযোগ দেওয়া হতে পারে। প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির আবেদন আহ্বান, গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হতে পারে। বদলির প্রক্রিয়াটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
এ বদলির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত অংশের (সরকারি অংশ) বেতন, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা ও জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ‘শাস্তিমূলক বা জনস্বার্থ’ বিবেচনায় বদলি ছাড়া চাকরিজীবনে কেবল একবার বদলির সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে বদলির কারণে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের শূন্যতা যাতে সৃষ্টি না হয় সেটি বিবেচনায় রাখা হবে। পারস্পরিক বদলির আবেদনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক উভয়ের সম্মতি থাকলে বিবেচনা করা হবে।
আরেকটি চিন্তা হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদের ৫০ ভাগ শূন্য থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে বদলির আবেদন বিবেচনা করা হবে না। আর পদ শূন্য না থাকলে বদলির কোনো আবেদনই বিবেচনা করা হবে না।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা চালু করা যায় কি না সেটি নিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে ভিন্নমতও আছে। তবে একজন শিক্ষককে চাকরিজীবনে অন্তত একবার বদলির সুযোগ দেওয়া যায় কি না সেটি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।